স্বদেশ ডেস্ক:
সাড়ে তিন বছরের বেশি সময় পর জাতীয় নির্বাহী কমিটির আদলে বৈঠক ডেকেছে বিএনপি। আগামীকাল মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার ধারাবাহিক এ বৈঠক গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হবে। চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন ও আগামী
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির ইস্যু গুরুত্ব পাবে এ বৈঠকে। গত শনিবার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ বৈঠক ডাকা হয়।
সর্বশেষ খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার আগে ২০১৮ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি জাতীয় নির্বাহী কমিটির বৈঠক ডেকেছিলেন। দলটির নেতারা জানান, নানা সমীকরণ ও রাজনৈতিক প্রতিকূল পরিবেশ-পরিস্থিতির কারণে বিএনপি তার গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নিয়মিত নির্বাহী কমিটির বৈঠক করতে পারেনি। যদিও গঠনতন্ত্রে ১১ (চ) এ বলা আছে- প্রতি ছয় মাসে অন্তত একবার নির্বাহী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হবে। ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ ষষ্ঠ কাউন্সিলের পর ৫০২ সদস্যের নির্বাহী কমিটি ঘোষণা করা হয়। এর বাইরে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কমিটিও রয়েছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকজন নেতা দল ছেড়ে গেছেন এবং মারা গেছেন- এ কারণে বেশ কিছু পদ শূন্য রয়েছে। এবারের বৈঠককে বিএনপি নির্বাহী কমিটির বৈঠক না বলে নির্বাহী কমিটির নেতাদের ধারাবাহিক বৈঠক বলছে।
দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স জানান, ‘জাতীয় নির্বাহী কমিটির বৈঠক সাধারণত কমিটির সব নেতাকে একত্রিত করে বড় পরিসরেই অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। কিন্তু চলমান রাজনৈতিক পরিবেশ-পরিস্থিতিতে বড় কোনো স্থান না পাওয়ায় গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ সভা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমরা এটিকে নির্বাহী কমিটির বৈঠক বলছি না। আমরা বলছি নির্বাহী কমিটির নেতাদের ধারাবাহিক বৈঠক।’ তিনি আরও জানান, প্রথম দিন ভাইস চেয়ারম্যান ও উপদেষ্টা, দ্বিতীয় দিন যুগ্ম মহাসচিব, সম্পাদক ও সহসম্পাদক এবং তৃতীয় দিনে বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক হবে। বেলা সাড়ে ৩টা থেকে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এতে যুক্তরাজ্য থেকে স্কাইপির মাধ্যমে তারেক রহমান সভাপতিত্ব করবেন। মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির নেতারাও থাকবেন।
জানা যায়, এ বৈঠকের পর নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ৮১টি সাংগঠনিক জেলা ও মহানগরের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে তাদের মতামত নেওয়া হবে। এর পর ২০-দলীয় জোট, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, বিরোধী রাজনৈতিক দল এবং দেশের বিশিষ্ট নাগরিকদের মতামত নেওয়া হবে। সবার মতামত বিচার-বিশ্লেষণ করে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবিতে দলের নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি রাজপথে নামাসহ বিস্তারিত সিদ্ধান্ত নেবে।
দলের গুরুত্বপূর্ণ একাধিক নেতা জানান, বিএনপির মূল পরিকল্পনা হচ্ছে- নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ও নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবিতে একই প্ল্যাটফরমে সবাইকে আনা।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যে প্রস্তুতির কথা বলেছেন- তা নিয়ে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। নেতাদের সবারই প্রশ্ন ছিল- সরকারের মেয়াদ এখনো দুই বছরের বেশি সময় বাকি। কেন প্রধানমন্ত্রী এত আগভাগে নির্বাচনের কথা বলছেন? এই অবস্থার মাঝে আগামী বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে। নতুন কমিশন গঠন নিয়ে চলতি বছরে সরকার প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে। এটি নিয়ে বিএনপিকে সরকার ব্যস্ত রাখতে পারে।
সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নানা কারণেই এ সভা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের মূল এজেন্ডা থাকবে নিরপেক্ষ সরকার ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন আদায়ে আন্দোলন। সেই আন্দোলন কীভাবে কার্যকর রূপ নিতে পারে সে ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা হবে।
স্থায়ী কমিটির বৈঠক সূত্র আরও জানায়, স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সব নেতাই একমত হন, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে হলে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার হতে হবে। কারণ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি এবং ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের ভোট প্রমাণ করে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। এ অবস্থায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন ও বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে করণীয় ঠিক করতে হবে। এ জন্য দলের সবার সঙ্গে শলাপরামর্শ করতে হবে।
দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ এক নেতা আমাদের সময়কে বলেন, আন্দোলন সফল করতে হলে সবার মতামত নেওয়া ভালো। এতে সবাই মনে করবে সিদ্ধান্তের সঙ্গে তিনিও অংশীদার। এ জন্যই এ বৈঠক ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলের স্থায়ী কমিটি।
স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার, সাংগঠনিক গতি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত : তৃণমূল পর্যায়ে সাংগঠনিক গতি বাড়াতে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এ সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। গতকাল রবিবার দলের দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স জানান, মহামারীর কারণে বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম/সাংগঠনিক গঠন ও পুনর্গঠন প্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়েছিল। বাস্তবতার নিরিখে দলীয় কার্যক্রমের অগ্রগতির জন্য সাংগঠনিক কার্যক্রম/সাংগঠনিক গঠন ও পুনর্গঠন পুনরায় চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছে। নেতাকর্মীদের সামাজিক দূরত্ব বজায় এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অনুরোধ জানান তিনি।
১২ নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হচ্ছে
ছাত্রদলের কমিটি গঠন কেন্দ্র করে বিক্ষোভ ও দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ভাঙচুরের অভিযোগে ২০১৯ সালের ২২ জুন সংগঠনের প্রভাবশালী ১২ নেতাকে বহিষ্কার করা হয়। তারা হলেন- ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি এজমল হোসেন পাইলট, ইকতিয়ার কবির, জয়দেব জয়, মামুন বিল্লাহ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, বায়েজিদ আরেফিন, সহসাধারণ সম্পাদক দবির উদ্দিন তুষার, সহসাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আজম সৈকত, আবদুল মালেক এবং সদস্য আজীম পাটোয়ারী, ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক বাশার সিদ্দিকী এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি জহিরউদ্দিন তুহিন। পরে তাদের সঙ্গে তারেক রহমান ভার্চুয়াল বৈঠক করেন। বৈঠক থেকে বেরিয়ে বহিস্কৃত নেতারা জানিয়েছিলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তাদের ক্ষমা করে দিয়েছেন। কিন্তু দুই বছরের বেশি সময় হলেও তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়নি। বিষয়টি শনিবারের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে তোলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায়। তার বক্তব্যকে সমর্থন জানান মহাসচিবসহ অন্য নেতারা। সবার মতামত শুনে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত দেন তারেক রহমান।
জাসাসের কমিটি বিলুপ্ত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ ও চিত্রনায়ক হেলাল খানের নেতৃত্বাধীন জাসাসের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এ সিদ্ধান্ত অবিলম্বে কার্যকর হবে।
ভেঙে দেওয়া হতে পারে মহিলা দল : গত শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনাসভায় চেয়ারে বসা নিয়ে তাদের ঝগড়ার ঘটনায় বিব্রত দলের শীর্ষপর্যায়ের নেতারা। জাতীয় প্রেসক্লাবে ওই আলোচনাসভা শুরুর সময় সংগঠনের সভাপতি আফরোজা আব্বাস ও সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদের অনুসারীদের মধ্যে ঝগড়া হয়। একপক্ষ অন্যপক্ষকে অনুষ্ঠান থেকে বের করে দিতেও চায়। বিষয়টি তারেক রহমানের নজরে দেওয়া হয়েছে। দলের নেতারা জানান, রাজপথে আন্দোলনে নামার আগে গ্রুপিংয়ে ব্যস্তদের কোনো কমিটিতেই গুরুত্বপূর্ণ পদে আনা হবে না। মহিলা দলের বেলায়ও এর ব্যত্যয় ঘটবে না। যে কোনো সময় ভেঙে দেওয়া হতে পারে মহিলা দলের কমিটি। নতুন কমিটিতে মহিলা দলের বাইরে থেকে একেবারে নতুনদের নেতৃত্বে আনারও চিন্তা করছেন দলের শীর্ষ নেতা।